মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৮ অপরাহ্ন

বিদায় নিচ্ছে মৌসুমি বায়ু, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার আশঙ্কা

রিপোর্টারের নাম / ১৪১ টাইম ভিউ
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৮ অপরাহ্ন

বিদায় নিচ্ছে বর্ষাবাহী মৌসুমি বায়ু। চলতি মাসের মধ্যভাগের আগেই ফিরে চলে যাবে বর্ষাকাল। চলতি বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা যায়নি অনেক অঞ্চলে। তবে বিদায় হওয়া সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিকভাবে সারা দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে, রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কম এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। 

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়েছে, চলতি অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম (জিএফএস) আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল বিশ্লেষণ করে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, বঙ্গোপসাগরে আবারও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি অক্টোবর মাসের ১৫ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, অক্টোবর মাসের এই সময়ে অতীতে বারবার ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে দেশে। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ সৃষ্টি হয়েছিল। এই দুটি ঘূর্ণিঝড়ই সরাসরি বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল উপকূলে আঘাত হেনেছিল।

তিনি বলেন, আগামী  শনিবারের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ওপরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজ বুধবার থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠতে পারে। ফলে শনিবার পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য অনিরাপদ আবহাওয়া বিরাজ করার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় সমুদ্র উত্তাল থাকার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার সমুদ্রগামী জেলেদের মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকার ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. ছাদেকুল আলম। পরে মাসব্যাপী প্রদত্ত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মাসের প্রথমার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে বিদায় নিতে পারে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দুই-চার দিন মাঝারি থেকে তীব্র বজ্রঝড় এবং সারা দেশে তিন-পাঁচ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে; তবে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকবে। বন্যার পূর্বাভাস জানিয়ে সংস্থাটি জানায়, অক্টোবর মাসে দেশের প্রধান নদনদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। তবে ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মুলত অক্টোবরের প্রথমভাগেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে বিদায় নিয়ে থাকে। রংপুর থেকে আগেভাগে বিদায় নেয়। তবে এবার একটু বিলম্ব হচ্ছে। সারা দেশে থেকে বিদায় নেবে। একই সঙ্গে অক্টোবর মাস ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস। এই সময়ে সাগরে একাধিক সিস্টেম তৈরি হয়। এবারও চলতি মাসে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা প্রবল।

আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমে সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পূর্বে এমন ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হয়েছে। তাই তিনি এই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে বলেছেন। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা থাকায় বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আগাম প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সময় উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা এবং মাছ ধরার নৌকাগুলোকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলেদের সতর্ক করতে হবে। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত মোকাবিলার জন্য উপকূলীয় জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। আবহাওয়াবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন, উপকূলীয় অঞ্চলে যারা বসবাস করেন, তাদের যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উপকূলীয় এলাকায় দ্রুতগতিতে সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ।

পলাশ গতকাল রাতে জানান, সোমবার থেকে রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে বৃষ্টিপাত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে এসেছে। ফলে তিস্তা নদীর পানির উচ্চতা বন্যা বিপত্সীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *